সালাফি আন্দোলন
টেমপ্লেট:Expand টেমপ্লেট:Distinguish টেমপ্লেট:Sunni Islam টেমপ্লেট:সালাফি সালাফি আন্দোলন (টেমপ্লেট:Lang-ar) বা সালাফি মানহাজ সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত।
সালাফ (আরবি: سلف) বলতে ইসলাম ধর্মানুসারে সাধারণত নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরবর্তী তিন প্রজন্ম অর্থাৎ সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবিয়ীকে বুঝানো হয়।
সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এবং সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ-যাঁদের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলে গিয়েছেন, যারা হলেন উম্মাতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মাত। আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরবর্তী তিন প্রজন্ম অর্থাৎ সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবিয়ীগন ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফি বলা হয়।
এই আন্দোলনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব নজদী সাহেব এর বিশেষ অবদান আছে। তিনিও একজন নজদী সালাফি পণ্ডিত ছিলেন। সালাফিরা মাজার কেন্দ্রিক শিরকী কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে। সব ধরনের শিরক থেকে,বিদআত থেকে মুসলিমদের সতর্ক করে । সালাফিবাদ ইসলামের আক্ষরিক, কঠোর ও বিশুদ্ধ চর্চা এবং বিশেষত সালাফ তথা ইসলামের প্রথম যুগের চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সালাফিবাদ অন্যতম প্রভাবশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল মতাদর্শ।[১][২][৩][৪] সালাফিবাদ সুফিবাদের বিরোধিতা করে কারন সুফিবাদের কিছু কিছু কাজ ও কথা রয়েছে যা শিরক ,বিদআত, যাহা কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ সূত্রে বর্নিত হাদিসের দলিল দ্বারা প্রমানিত হয়ে গেছে ।
মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাযহাব হল মুসলিমদের একমাত্র মাযহাব।শরিয়তের কোনো বিধানের ক্ষেত্রে ৪টি মাযহাব প্রচলিত রয়েছে।
অধিকাংশ সালাফী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী।সালাফীরা হাম্বলী মাযহাবকে তুলনামূলক বেশি অনুসরণ করলেও কখনো নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের উপর আঁকড়ে ধরে থাকে না, আবার কোনো মাযহাবকে ফেলেও দেয় না। সালাফিবাদে হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী এই চার মাযহাবকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রচলিত ৪ মাযহাব মানার বিধান
উত্তর প্রদানে সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)]
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের যে চারটি মাযহাব মুসলিমদের মধ্যে অবশিষ্ট, সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত রয়েছে, তার মধ্য থেকে কোনো একটি মাযহাব অবলম্বন করায় এবং সে মাযহাবের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো সমস্যা নেই। যেমন বলা হয়: অমুক শাফি‘ঈ, অমুক হাম্বলী, অমুক হানাফী, অমুক মালিকী।
‘উলামাদের মধ্যে, এমনকি বড়ো ‘উলামাদের মধ্যেও অনেক পূর্ব থেকেই এই উপাধীর অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। বলা হয়, অমুক হাম্বালী। যেমন বলা হয়, ইবনু তাইমিয়্যাহ হাম্বালী, ইবনুল ক্বাইয়্যিম হাম্বালী প্রভৃতি। এতে কোনো সমস্যা নেই। কোনো মাযহাবের দিকে স্রেফ নিজেকে সম্পৃক্ত করায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একটি শর্ত রয়েছে। আর তা হলো—এই মাযহাবে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। এভাবে যে, উক্ত মাযহাবে যা আছে সে তার সবই গ্রহণ করে। তাই তা সঠিক কিংবা ভুল হোক, অথবা ভুল কিংবা সঠিক হোক।
বরং সে তা থেকে কেবল সেটাই গ্রহণ করবে, যেটা সঠিক। আর যেটাকে সে ভুল হিসেবে অবগত হয়েছে, সেটার ওপর আমল করা জায়েজ নয়। তার কাছে যদি (অনেকগুলো মতের মধ্যে) কোনো মত অগ্রাধিকারযোগ্য হিসেবে উদ্ভাসিত হয়, তাহলে সেই মত গ্রহণ করা তার জন্য ওয়াজিব। সেই অগ্রাধিকারযোগ্য মতটি তার মাযহাবে থাকুক, কিংবা অন্য মাযহাবে থাকুক। কেননা যখন কারও কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ স্পষ্ট হয়ে গেছে, তার জন্য অন্য কারও কথা অনুসরণ করে সেই সুন্নাহ বর্জন করার কোনো অধিকার নেই।
প্রকৃতপক্ষে আদর্শ হলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাযহাবের কথা গ্রহণ করব, যতক্ষণ না তা রাসূলের ﷺ কথার বিরোধী হচ্ছে। যখন মাযহাবের কথা রাসূলের ﷺ কথার বিরোধী প্রমাণিত হবে, তখন সেটা মুজতাহিদের ভুল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে মুজতাহিদের কথা বর্জন করে সুন্নাহকে গ্রহণ করা এবং সুন্নাহ মোতাবেক অগ্রাধিকারযোগ্য মতকে বরণ করা—সে মতটি যে মাযহাবেরই হোক না কেন—আমাদের জন্য ওয়াজিব।
[ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭০১-৭০২; দারু ইবনি খুযাইমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি.]
ইসলামের দ্বিতীয় শতাব্দীতে গড়ে উঠা আহলুল হাদিস আন্দোলন সালাফি আন্দোলনের সাথে একই সূত্রে গাঁথা।
সালাফি মানহাজের মূলনীতি সালাফি পণ্ডিত এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইবনে উমর বাজমুল তার সালাফি মানহাজ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন, যার আলোচ্য সূচি নিম্নরূপঃ
- প্রথম উদ্দেশ্য: সালাফি পদ্ধতির সংজ্ঞা,এর মূলনীতি, এটি মেনে চলার বিধান এবং এর গুনাবলীর উল্লেখ, সালাফিয়ার মৌলিক নীতিসমূহ
- প্রথম নীতি: আল্লাহর ইবাদত কায়েম করা পুণ্যবান পূর্বসূরিদের (আল-সালাফ আল-সালিহ) বোধ অনুযায়ী কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহকে মেনে চলার মাধ্যমে
- দ্বিতীয় নীতি: জামাআতকে শক্ত করে ধরে রাখা এবং [মুসলিম শাসকদের] শ্রবণ ও আনুগত্য করা।
- তৃতীয় নীতি: ধর্মীয় উদ্ভাবন (বিদআত) এবং ধর্মীয় উদ্ভাবক (মুবতাদিউন) সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক থাকা
- সালাফীরা ধর্মীয় উদ্ভাবনশীল (বিদআতী) জনগণের সমাবেশ থেকে দূরে থাকে
- সালাফী পদ্ধতি অনুসরণ সংক্রান্ত বিধান
- সালাফী পদ্ধতি অনুসরণের উপকারিতা
- দ্বিতীয় উদ্দেশ্য: সালাফী পদ্ধতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
- প্রথম বৈশিষ্ট্য: তাদের আনুগত্য এবং বিচ্ছিন্নতা (আল-ওয়ালা' ওয়া আল-বারা') রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ অনুসরণ করে আবর্তিত হয়।
- দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: তাদের বৈশিষ্ট্য হল যে তারা সুন্নাহ অনুসরণ করে
- তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: তারা তাদের সকল বিষয়ে মধ্যমপন্থী ও সংযমশীল
- চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: তারা এমন মানুষ যারা ঐক্যবদ্ধ এবং চুক্তিবদ্ধ এবং তারা সত্যের উপর দৃঢ় এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
- পঞ্চম বৈশিষ্ট্য: তারা সঠিক ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ এবং এর প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ম প্রতিষ্ঠার দিকে কাজ করে
- তৃতীয় উদ্দেশ্য: সুন্নাহ ও জামাতের লোকদের আদর্শ অনুসারে সংশোধন অর্জনের উপায়
- প্রথম মানদণ্ড: এই সংশোধনের সূচনা ও ভিত্তি হল আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাকে ইসলামী একেশ্বরবাদ (তাওহিদ) দিয়ে একক করা।
- দ্বিতীয় মানদণ্ড: সংশোধন ব্যক্তি দ্বারা শুরু হয় এবং এটি সম্প্রদায়ের সাথে শুরু হয় না, নেতা বা তিনি ব্যতীত অন্যরা - বাস্তবে প্রতিটি ব্যক্তির নিজের নিজের থেকে শুরু করা উচিত তারপর যারা তাদের সবচেয়ে কাছের এবং তারপর যারা তাদের কাছে সবচেয়ে কাছের তারা।
- তৃতীয় মানদণ্ড: জ্ঞানের গুরুত্ব বক্তৃতা এবং কর্মের আগে
- চতুর্থ মানদণ্ড: তার জ্ঞান পূর্বসূরীদের (আল-সালাফ আল-সালিহ) বোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত
- পঞ্চম মানদণ্ড: [আল্লাহকে] ডাকার সময় নিজেকে সজ্জিত করা সেসব গুণে, যেসব গুণাবলী কুরআনে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) হাদীসে এবং সালাফদের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে
আরও দেখুন
- আছারী
- আহল-ই-হাদীস
- ওয়াহাবিবাদ
- ইবনে তাইমিয়া
- সুফি–সালাফি সম্পর্ক
- রাজনৈতিক ইসলাম
- ইসলামবাদ
- জিহাদবাদ
- মানহাজ
- ঐতিহ্যবাহী সালাফিবাদ
- সালাফি জিহাদবাদ
- আল-আকিদাহ আল-ওয়াসিতিয়্যাহ
- কিতাবুত তাওহিদ (ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের বই)
- রাসূলের নামাযের বৈশিষ্ট্য (বই)
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- Muhammad in History, Thought, and Culture: An Encyclopedia of the Prophet of God (2 vols.), Edited by C. Fitzpatrick and A. Walker, Santa Barbara, ABC-CLIO, 2014. টেমপ্লেট:আইএসবিএন