ভালোবাসা
টেমপ্লেট:ভালোবাসা টেমপ্লেট:আবেগভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।[১] বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।[২][৩] ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। যেমন একজন মায়ের ভালবাসা একজন সঙ্গীর ভালবাসা থেকে আলাদা, যা আবার খাবারের প্রতি ভালবাসা থেকে ভিন্ন। সাধারণত, ভালোবাসা বলতে একটি তীব্র আকর্ষণ এবং মানসিক সংযুক্তির অনুভূতিকে বোঝায়।[৪][৫][৬] ভালোবাসাকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই মনে করা হয়। এর গুণগুলো মানুষের উদারতা, সহানুভূতি এবং স্নেহের প্রতিনিধিত্ব করে যেমন অন্যের ভালোর জন্য নিঃস্বার্থ থাকা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা। এর বিপরীতে আছে নৈতিক ক্রুটি,অহংকার,স্বার্থপরতা,আত্ম-প্রেম এবং অহংবোধ যা মানুষকে এক ধরনের উন্মাদনা, আবেশ বা সহনির্ভরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।[৭][৮] ভালোবাসা অন্যান্য মানুষ, নিজের বা প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং স্নেহপূর্ণ কাজকে বর্ণনা করতে পারে।[২] এটি বিভিন্নভাবে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের একটি প্রধান সহায়কের ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রীয় মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে, ভালোবাসা সৃজনশীল শিল্পকলার সবচেয়ে সাধারণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।[৯] ভালোবাসাকে এমন একটি ফাংশন বলা হয় যা মানুষকে হুমকির বিরুদ্ধে একত্রে রাখে এবং প্রজাতির ধারাবাহিকতাকে সহজতর করে।[১০]
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা ভালোবাসার ছয়টি রূপ শনাক্ত করেছিলেন: যেগুলো মূলত, পারিবারিক ভালোবাসা (গ্রিক: স্টার্জে), বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা বা প্লেটোনিক ভালোবাসা (ফিলিয়া), রোমান্টিক ভালোবাসা (ইরোস),নিজেকে-ভালোবাসা (ফিলাউটিয়া), অতিথিকে ভালোবাসা (জেনিয়া) এবং ঐশ্বরিক বা নিঃশর্ত ভালবাসা (আগাপে)। আধুনিক লেখকগণ ভালোবাসার আরও কিছু বৈচিত্র্য শনাক্ত করেছেন; যেমন: প্রতিদানহীন ভালোবাসা, শুন্য ভালোবাসা, মুগ্ধ ভালোবাসা,পরিপূর্ণ ভালোবাসা, দরদী ভালোবাসা,আত্মভালোবাসা এবং সৌজন্যমূলক ভালোবাসা। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রেন, ইউয়ানফেন, মামিহলাপিনাতাপাই, কাফুনে, কামা, ভক্তি, মৈত্রী, ইশক, চেসেড, আমোর, চ্যারিটি, সওদাদের মতো সাংস্কৃতিকভাবে অনন্য শব্দসমূহ ভালোবাসার সংজ্ঞা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[১১][১২][১৩]
গত দুই দশকে আবেগের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালোবাসার রঙ চাকা তত্ত্ব থেকে তিনটি প্রাথমিক, তিনটি মাধ্যমিক এবং নয়টি তৃতীয় স্তরের ভালোবাসার পরিচয় পাওয়া যায়, যেগুলোকে একটি রঙের চাকায় বর্ণনা করা হয়। ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্ব পরামর্শ দেয় "ঘনিষ্ঠতা, আবেগ এবং প্রতিশ্রুতি" ভালোবাসার মূল উপাদান। ভালোবাসার অতিরিক্ত ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে। ব্যবহার এবং অর্থের এই বৈচিত্র্য এর সাথে জড়িত অনুভূতিগুলোর জটিলতার সাথে মিলিত হয়ে অন্যান্য মানসিক অবস্থার তুলনায় ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা অস্বাভাবিকভাবে কঠিন করে তোলে।
সংজ্ঞা



ভালোবাসার সংজ্ঞা বিতর্ক, অনুমান, এবং অর্ন্তদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই ভালোবাসার মত একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ ভালোবাসা, কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোবাসা এসব ভাগে ভাগ করার পক্ষপাতী নন। তবে এসব ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা যেতে পারে। সাধারণ মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতিক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত। অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা, নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
ভালোবাসার সাধারণ এবং বিপরীত ধারণার তুলনা করে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসাকে জটিলভাবে বিচার করা যায়। ধনাত্মক অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেওয়া যায়। ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে। কল্পনাবিলাসিতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হচ্ছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা সাধারণত কেবল বন্ধুত্ব নয়। যদিও কিছু সম্পর্ককে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব বলেও অভিহিত করা যায়।
নৈর্ব্যক্তিক
বলা যেতে পারে যে মানুষ একটি বস্তু, নীতি বা লক্ষ্যকে ভালোবাসে যার প্রতি তারা গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যা অত্যন্ত মূল্যবান। উদাহরণস্বরূপ,স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের "ভালবাসার" কারণ কখনও কখনও আন্তঃব্যক্তিক ভালোবাসা নয় বরং নৈর্ব্যক্তিক ভালোবাসা। পরার্থপরতা এবং দৃঢ় আধ্যাত্মিক বা রাজনৈতিক প্রত্যয় থেকে এর জন্ম হতে পারে।[১৪] মানুষ বিভিন্ন বস্তু, প্রাণী বা ক্রিয়াকলাপকে "ভালবাসতে" পারে যদি তারা নিজেদেরকে বন্ধনে আবদ্ধ করে বা সেই জিনিসগুলোর সাথে একাত্মতা অনুভব করে। যদি যৌন আবেগও জড়িত থাকে তবে এই অনুভূতিকে যৌন বিকৃতি বলা হয়।[১৫]
আন্তঃব্যক্তিক
জৈবিক ভিত্তি
টেমপ্লেট:মূল যৌনতার জৈবিক মডেলকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি ড্রাইভ অর্থাৎ তাড়না হিসাবে মনে করা হয় যা অত্যধিক ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মতো।[১৬] হেলেন ফিশার প্রেম বিষয়ে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। প্রেমের অভিজ্ঞতাকে তিনি তিনটি আংশিক ওভারল্যাপিং পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন: উদাহরণস্বরূপ, কামনা, আকর্ষণ, এবং সংযুক্তি। কামনা হল যৌন বাসনা পূরণ করার জন্য এক ধরনের অনুভূতি। রোমান্টিক আকর্ষণ মূলত নির্ধারণ করে কোন ব্যক্তির সঙ্গী কতটা আকর্ষণীয় তার উপর। তাছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, যেমন, একই সাথে একটি বাড়িতে অবস্থান করা, পিতামাতার প্রতি কর্তব্য, পারস্পরিক প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনুভূতিগুলিও জড়িত থাকে।[১৭] এই তিনটি রোমান্টিক শৈলীগুলির সাথে নিউরাল সার্কিটগুলি, নিউরোট্রান্সমিটার এবং তিনটি আচরণগত নিদর্শন সংযুক্ত সব সময় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।[১৭]

কামনা হল যৌন বাসনার প্রাথমিক ধাপ যা টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মতো রাসায়নিক পদার্থ বর্ধিত ত্যাগ করে। এর প্রভাব কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আকর্ষণ আরও স্বতন্ত্র এবং রোমান্টিক হয় একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর জন্য, যার মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র লালসা বিকশিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ মূলত প্রেমে পড়ে যখন তার মস্তিষ্ক নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সেটের রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে। উদাহরণস্বরূপ, নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন, এবং সেরোটোনিন এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অ্যামফিটামিন এক ধরনের পদার্থ ত্যাগ করে যার ফলে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায়, ক্ষুধা এবং ঘুম হ্রাস পায়, এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পর্যায় সাধারণত দেড় থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।[১৮]
যেহেতু কামনা এবং আকর্ষণ এর পর্যায়গুলিকে অস্থায়ী বলে মনে করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য একটি তৃতীয় পর্যায় প্রয়োজন। সংযুক্তি হল এক ধরনের বন্ধন যার কারণে সম্পর্ক অনেক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সংযুক্তি সাধারণভাবে বিবাহ বা শিশু জন্মদান করার মত অঙ্গীকারগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তাছাড়া পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পছন্দের বিষয়গুলি ভাগ করে নেয়ার কারণেও সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্র বেশি পরিমাণে রাসায়নিক অক্সিটোসিন এবং ভ্যাসোপ্রেসিন নির্গত হয়।[১৮] এনজো ইমানুয়েল এবং তার সহকর্মীরা রিপোর্ট করেন যে প্রোস্টেট অণুটি স্নায়ু বৃদ্ধিকারক ফ্যাক্টর (এনজিএফ) নামে পরিচিত, যখন লোকেরা প্রথম প্রেমে পড়ে তখন তার মাত্রা অনেক বেশি থাকে, কিন্তু এক বছর পর তারা আবার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসে।[১৯]
বিবর্তনীয় ভিত্তি

বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ভালবাসাকে টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে দেখায়। মানুষ সহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী তাদের জীবনকালের দীর্ঘ সময় পিতামাতার সাহায্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। এই সময়ে ভালবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, ভালোবাসা কীভাবে মানব বিবর্তনের দ্বারা গড়ে উঠেছে এর উপর ভিত্তি করে ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা এবং আচরণ নিয়ে আরও গবেষণা করা যেতে পারে।[২০]
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা
সাংস্কৃতিক দিক থেকে
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ↑ Oxford Illustrated American Dictionary (1998) + Merriam-Webster Collegiate Dictionary (2000)
- ↑ ২.০ ২.১ Fromm, Erich; The Art of Loving, Harper Perennial (1956), Original English Version, টেমপ্লেট:আইএসবিএন উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Fromm, Erich 1956" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ Merriam Webster Dictionary
- ↑ Oxford Illustrated American Dictionary (1998)
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ Roget's Thesaurus (1998) p. 592 and p. 639
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ Helen Fisher. Why We Love: the nature and chemistry of romantic love. 2004.
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ Liddell and Scott: φιλία টেমপ্লেট:Webarchive
- ↑ টেমপ্লেট:Cite book (J. Mascaró, translator)
- ↑ Fromm, Erich; The Art of Loving, Harper Perennial (5 September 2000), Original English Version, টেমপ্লেট:ISBN
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web
- ↑ টেমপ্লেট:Cite book
- ↑ ১৭.০ ১৭.১ টেমপ্লেট:Cite web Defining the Brain Systems of Lust, Romantic Attraction, and Attachment by Fisher et al.
- ↑ ১৮.০ ১৮.১ টেমপ্লেট:Cite book
- ↑ টেমপ্লেট:Cite journal
- ↑ "Evolutionary psychology: the emperor's new paradigm" by D. J. Buller in Trends Cogn. Sci. (2005) Volume 9 pages 277-283.