আয়িশা

সালাফিপিডিয়া থেকে

টেমপ্লেট:অন্য ব্যবহার টেমপ্লেট:তথ্যছক ব্যক্তি টেমপ্লেট:মুহাম্মাদের স্ত্রীগণ আয়িশা বিনতে আবু বকর ছিলেন ইসলামের নবি মুহাম্মদ (সা:)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে একজন।[১] তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)-এর তৃতীয় স্ত্রী এবং তাঁর সকল বিবাহিত স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র কুমারী নারী। ইসলামের ঐতিহ্য অনুসারে, তাকে "উম্মুল মু'মিনিন" বা "বিশ্বাসীদের মাতা" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায় তাকে মুহাম্মদের (সা.) স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকেন। এছাড়া ইসলামের ঐতিহ্যগত ইতিহাসেও তার অবদান অনস্বীকার্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[২][৩][৪] (বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫৮৭০ টি মতান্তরে ২২১০ টি)

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

আয়িশা ৬১৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে মতান্তরে ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন।[৫][৬] আবু বকর তার পিতা, যিনি মুহাম্মদের (সা.) অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন সাহাবী ও সহচর ছিলেন।[৭] তার পিতার নাম আবু বকর ও মাতার নাম উম্মে রুমান বিনতে আমির

মুহাম্মদের সাথে বিবাহ[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

মুহাম্মাদ (সা.) এর সঙ্গে আয়িশার বিয়ে হয় মূলত খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ এর মৃত্যুর পরে। মুহাম্মদ সা: সওদাকে (যাম'আ ইবনে কাঈসের কন্যা) বিয়ে করার পর আয়িশাকে পরবর্তীতে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। তার বিয়ে খাদিজার মৃত্যুর পরে হয়েছিল, এ পক্ষে বেশিরভাগ গবেষকই একই মত পোষণ করেন। যদিও, তার বিয়ে হিজরতের দুই না তিন বছর আগে হয়েছিল, এ নিয়ে ভিন্নমত প্রচলিত আছে। কিছু সুত্র থেকে পাওয়া যায় যে মুহাম্মদের সা: সঙ্গে তার বিবাহ্ সওদার সঙ্গে বিয়ের পূর্বে হয়েছিল৷ যদিও বেশিরভাগ হাদীস মোতাবেক, মুহাম্মদ (সা.) সওদাকে আয়িশার পূর্বে বিয়ে করেছিলেন। এটি প্রচলিত যে, উসমান বিন মা'যুনের স্ত্রী খাওলা আবু বকরের নিকট দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং এই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বয়সের দিক থেকে তিনি ছিলেন মুহাম্মাদের স্ত্রীদের মাঝে কনিষ্ঠতমটেমপ্লেট:Cn

বিয়ের সময় আয়িশার বয়স[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

বিয়ের সময় আয়িশার বয়স কত ছিল এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন সুত্র অনুযায়ী মুহাম্মদদের সা: সঙ্গে তার বিবাহ এবং এর সিদ্ধি মূলত সার্থক হয়েছিল যখন আয়িশার বয়স ছিল ৬ বছর। আহলুল সুন্নাহ্ বা সুন্নিদের হাদিসের বর্ননা অনুযায়ী প্রচলিত তথ্যমতে, মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে যখন আয়িশার বিয়ে হয়, তখন তার বয়স ছিল ১৩-১৭ বছর।[৮][৯] আর বদরের যুদ্ধের সময় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে নয় বছর বা মতান্তরে দশবছর বয়স থেকে তার বৈবাহিক জীবন শুরু হয়। এর পূর্বে তিনি তার বিবাহপরবর্তী সময় তার পিত্রালয়েই শিশুবৎসলভাবে অতিবাহিত করেন।[১০][১১]

শিয়া পণ্ডিত আল সাঈদ জাফর মুর্তাযা আল-আমিলী এ ব্যাপার অস্বীকার করেন যে, আয়িশা ৬-৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। তার মতে বিয়ের সময় আয়িশা ১৩-১৭ বছর বয়সী ছিলেন। তিনি ইবনে ইসহাকের বিবৃত এক তথ্য (যেখানে উল্লেখ আছে যে আয়িশা সে লোকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যারা নবুয়তের অল্প সময় পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন) অনুসারে ঘোষণা করেন যে আয়িশা নিশ্চয়ই বিয়ের সময় ৬ বছর বয়সী ছিলেন, নবুয়তের সময় তিনি ৭ বছর বয়সী ছিলেন এবং হিজরতের সময় তিনি ২০ বছর বয়সী ছিলেনটেমপ্লেট:Cn। অন্যথায় আয়িশা ইসলাম গ্রহণের সময় বয়সে ৭ বছরের নিচে ছিলেন।

মুহাম্মদের সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

হিজরতের পূর্বে মুহাম্মাদ তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুতে অত্যন্ত ব্যথিত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আয়িশার সাথে তার বৈবাহিক জীবন অনেকাংশে তাকে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।[১২][১৩][১৪][১৫][১৬] তার প্রথম স্ত্রীর পর আয়িশা ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রী। অনেক নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। একটি হাদিসে দেখা যায়, এক সাহাবী যখন তাকে প্রশ্ন করলেন, "এই জগতে কোন মানুষটিকে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন?" তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "আয়িশা।"।[১৭] আরেকটি হাদিসে পাওয়া যায়, আয়শার কক্ষটি তিনি এমনভাবে বানিয়েছিলেন যে তার দরজা সরাসরি মসজিদের দিকে ছিল।[১৮][১৯] তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী যিনি সামনে থাকা অবস্থায় তার কাছে ওহি অবতীর্ণ হয়েছিল।[২০][২১]। অধিকন্তু, আয়েশা ও মুহাম্মাদের মাঝে অত্যন্ত সুসংহত বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক ছিল।[২২] তিনি তার অনেক জ্ঞান ও আদর্শ আয়শাকে নিজ কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রদান করেছিলেন এবং অনেক সাহাবীকেই তিনি আয়িশার কাছ থেকে ধর্মীয় বিধান শিক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[২৩]

ব্যভিচারের অপবাদ ও ওহি নাজিলের মাধ্যমে সতীত্বের প্রমাণ[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

পবিত্র কুরআনের সুরা নুরে আয়িশার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগের ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ, আয়িশা তার গলার হার খুঁজতে গিয়ে তার হাওদা (উটের পিঠে পালকির ন্যায় কক্ষযুক্ত বাহন) ছেড়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে দাসগণ হাওদায় উঠে পড়েন এবং আয়িশার অনুপস্থিতিতে ওজনের তারতম্য না পেয়ে যাত্রা শুরু করে দেন। আয়িশা ফিরে এসে দেখেন কাফেলা তাকে ছাড়াই চলে গেছে। তখন তিনি সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। পরদিন সকালে সাফওয়ান বিন আল-মু'আত্তাল নাম্নী মুহাম্মদের সেনাদলের এক বেদুঈন সদস্য আয়িশাকে খুঁজে পায় এবং তাকে তার কাফেলার পরবর্তী বিশ্রামস্থলে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। এ ঘটনা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই, হাসসান বিন সাবিত, মিসতাহ ইবনে উসামা, হাম্মানাহ বিনতে জাহাশ (মুহাম্মাদের অপর স্ত্রী জয়নব বিনতু জাহাশ'র ছোট বোন), এসব সাহাবী গুজব ছড়াতে থাকে, আয়িশা ও সাফওয়ান ব্যভিচার করে এসেছে। উসামা ইবনে জায়িদ মুহাম্মদের কাছে আয়িশার প্রশংসা করে অপপ্রচারের বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি সুন্নি বর্ননামতে, এরপর আলি মুহাম্মদকে (সা.) পরামর্শ দেন যে, তিনি যেন আয়িশা কে তালাক দেন। মুহাম্মাদ (সা.) আয়িশার সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে আসলে তিনি আয়িশার ঘরে বসে থাকা অবস্থাতেই তার উপর ওহি অবতীর্ণ হয় এবং তিনি ঘোষণা করেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি আয়িশার সতীত্বের নিশ্চয়তার ওহি পেয়েছেন। সুরা নুরে ব্যভিচার ও অপবাদ বিষয়ে বিধান ও শাস্তির নিয়মের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। আয়িশার অপবাদ রটনাকারীরা শাস্তি হিসেবে ৮০টি বেত্রাঘাত সাজাপ্রাপ্ত হন।[২৪]

মধুর ঘটনা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

মুহাম্মাদ(সা.) প্রতিদিন আসরের সালাতের পর তার স্ত্রীদের কক্ষ পরিদর্শন করতেন এবং তাদের খোঁজখবর নিতেন।[২৫] একবার তার এক স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহশ এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু মধু পেলেন। এরপর থেকে যখনই মুহাম্মাদ জয়নবের ঘরে আসতেন, জয়নব তাকে কিছু মধু দিতেন, যা মুহাম্মদ (সা.) খুব পছন্দ করতেন। এরপর থেকে সবসময় মধু পান করার কারণে জয়নবের ঘরে মুহাম্মদ অধিক সময় ব্যয় করতেন। এ ঘটনায় তার দুইজন স্ত্রী আয়িশা ও হাফসা ক্ষুব্ধ হলেন এবং একটা ফন্দি আঁটলেন। মুহাম্মাদ (সা.) তাদের ঘরে গেলে একে একে দুজনেই আলাদাভাবে মুহাম্মদকে বললেন, তারা মুহাম্মদের (সা.) মুখ থেকে দুর্গন্ধময় মাগাফির নামক কিশমিশের গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি তা খেয়েছেন কিনা। উত্তরে তিনি তাদের বললেন যে তিনি জয়নবের কাছ থেকে মধু খেয়েছেন এবং তিনি আর কখনো সেটি খাবেন না।[২৬] এর পরপরই সূরা তাহরিমের একটি আয়াত অবতীর্ণ হয় যাতে বলা হয়, আল্লাহ বলেছেন আল্লাহ কর্তৃক বৈধকৃত সকল খাবার তিনি খেতে পারবেন।

এ ঘটনার পর লোকে বলাবলি করতে থাকে যে, মুহাম্মদের স্ত্রীগণ (সা.) তার সাথে ধারালোভাবে কথা বলছে এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এ ঘটনার কারণে মুহাম্মাদ (সা.) অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। তিনি দীর্ঘ এক মাস তার স্ত্রীগণের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ রাখলেন। হাফসাকে তার পিতা উমর অনেক শাসালেন এবং তা মুহাম্মদ (সা.) কে বললেন। অবশেষে, মুহাম্মদের স্ত্রীগণ তার প্রতি অনুগত হলেন এবং সত্য কথা বলতে, বিনীত আচরণ করতে,[২৭] এবং পরকালীন জীবনের প্রতি মনোযোগী হতে সম্মত হলেন।[২৮]

মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যু[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

আয়িশা বিবাহ পরবর্তী সমস্ত জীবনে নবী মুহাম্মদ(সা.)-এর সর্বাধিক প্রিয় স্ত্রী ছিলেন। যখন তিনি অসুস্থ হলেন এবং মৃত্যু নিকটবর্তী হওয়ার আশঙ্কা করলেন তখন তিনি তার স্ত্রীগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, পরবর্তী ক্রমে তিনি কার ঘরে থাকবেন? যখন তার স্ত্রীগণ বুঝতে পারলেন যে তিনি আয়িশার সাথে থাকতে চাইছেন তখন তারাও তদানুযায়ী অনুমতি ও সম্মতি দিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি তার ঘরেই ছিলেন এবং তার এই সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রীর বাহুতে মাথা রেখেই মুহাম্মাদ (সা.) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[২৯][৩০][৩১][৩২][৩৩]

পরবর্তী ভূমিকা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর আরও পনের বছর তিনি মদিনাতেই ছিলেন। তিনি তার অধিকাংশ সময় কুরআন ও মুহাম্মদের আদর্শ (সুন্নাতহাদিস) অধ্যয়নে ব্যয় করতেন।

খিলাফতকালীন সময়ে ভূমিকা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

প্রথম ও দ্বিতীয় খিলাফতের সময় ভূমিকা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর জনগণ আবু বকরকে খলিফা নির্বাচন করেন। তখন আয়িশা মুহাম্মদের স্ত্রী এবং খলিফার কন্যা হিসেবে সমধিক সম্মান পেতেন। এমনকি জনগণ তাকে মুহাম্মদ (সা.) এর কাছ থেকে "সিদ্দিক"(সত্যবাদী) উপাধি প্রাপ্ত আবু বকর এর কন্যা হিসেবে "সিদ্দিকা বিনতু সিদ্দিক"(সত্যবাদীর কন্যা সত্যবাদিনী) বলে ডাকতে শুরু করে।[৩৪] আবু বকর তার মৃত্যুর পূর্বকালে ওমরকে খলিফা নিযুক্ত করে যান।[৩৪] খলিফা উমরের শাসনামলেও তিনি দাপটের সাথে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহে মতামত প্রদান করার স্বাধীনতা লাভ করেছিলেন।[৩৪]

তৃতীয় খিলাফতের সময়ের ভূমিকা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

উমর আততায়ীর হাতে আহত হওয়ার পর মৃত্যুপূর্বে উসমানকে খলিফা নিযুক্ত করে যান। তিনি খলিফা হওয়ার পর উমাইয়াদের সুবিধা প্রদান করেন। খলিফা হওয়ার পর প্রথম দুই বছর উসমানের সাথে আয়িশার তেমন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে উসমানকে আয়িশা ঘৃণা করতে শুরু করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সাহাবী আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে ভুল বিচারে মারধর করা। এতে আয়িশা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং জনসম্মুখে বলে ওঠেন "এত তাড়াতাড়ি কীভাবে আপনি রাসুল (সা.) এর সুন্নাতকে ভুলে গেলেন যেখানে তাঁর চুলের গোছা, একটি জামা আর জুতো এখনো মলিন হয় নি?.."[৩৫] এভাবে খলিফা উসমানের সাথে আয়িশার রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। অবনতি একধাপ এগিয়ে যায় যখন ওসমান তার নিজ ভাই ওয়ালিদ ইবনে উকবার অপরাধের শাস্তির বিচার এড়িয়ে যান। আয়শা ও উসমানের মধ্যে এ নিয়ে তর্ক হয়, এক পর্যায়ে উসমান বলেন, কেন তিনি ঘর থেকে বের হলেন এবং কীভাবে তাকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছিল ?[৩৬] এর অর্থ ছিল এরকম ক্ষেত্রে আয়িশা ও তার মতো নারীদের কি এখনো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে জড়িত হওয়ার অধিকার ও সামর্থ্য আছে? জণগণ আয়িশা ও উসমানের সমর্থনে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল, একদল উসমানের পক্ষ নিলো, আরেকদল আয়িশাকেই উসমানের উপরে যোগ্য বলে দাবি করল।

আবদুল্লাহ ইবনে সাদকে মিশরের গভর্নর নিযুক্ত করার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। মিশরের মুহাম্মাদ ইবনে হুজায়ফা উসমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে নবীর স্ত্রীদের নামে বানিয়ে মিথ্যা চিঠি লেখেন। জনগণ উসমানের খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। একটি বিদ্রোহী দল উসমানের বাড়ি অবরোধ করলে মুহাম্মদ (সা.) এর এক স্ত্রী সাফিয়া বিনতে হুয়াই তাকে আক্রমণ হতে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, কিন্তু জনগণ তাকেও অসম্মানের সহিত সরিয়ে দেন, নবীর স্ত্রীর সাথে জনগণের এই ব্যবহারে আয়িশা খুবই অবাক ও মর্মাহত হন। মালিক আল আশতার আয়িশার কাছে উসমানকে হত্যা ও উক্ত চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়িশা উত্তর দেন, তিনি কখনোই মুসলিমগণ ও তাদের "ইমাম"কে হত্যার নির্দেশ দিতে চান নি। তিনি আরও দাবি করেন যে ওই চিঠিটি তার লেখা ছিল না। জনগণ উসমানের বিরোধিতা চালিয়ে যায়, ওদিকে আয়িশার মক্কা সফরের সময়ও চলে আসে। অবশেষে পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আয়িশা মক্কায় চলে যেতে প্রস্তুত হন। উসমান তাকে অন্য কিছু না বললেও জনগণের উপর তার প্রভাবের কথা চিন্তা করে তাকে থেকে যেতে বললেও তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে মক্কার পথে যাত্রা অব্যহত রাখেন এবং মক্কায় চলে যান।[৪]

প্রথম ফিতনা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:মূল

রাশিদুন খিলাফতে চার রাশিদুন খলিফার অধীনস্থ এলাকাসমূহ। উক্ত বিভক্ত এলাকাগুলো খলিফা আলির খিলাফতকালীন সময়ের প্রথম ফিতনার সাথে সম্পর্কিত। টেমপ্লেট:Legend টেমপ্লেট:Legend টেমপ্লেট:Legend

উসমান ঘাতক কর্তৃক নিহত হলে অনেক ব্যক্তিবর্গ আলিকে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট, একথা বলাবলি করতে থাকে। আলি সরাসরি এ কথা অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে জনগণ তাকে খলিফা নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তবুও জণগণ জোরপূর্বক তাকে খলিফা মনোনীত করে। এরপরেও হত্যার সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে আলির সম্পর্ক বিষয়ে তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে। একপর্যায়ে তা চরম আকার ধারণ করতে থাকে এবং আয়িশাও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। হত্যার প্রতিশোধ নেওবার উদ্দেশ্যে তিনি জনগণের সাথে এক হন এবং বসরার ময়দানে আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজনে শরিক হন। আলির বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে তিনি পেছন থেকে নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দেন। ইসলামের ইতিহাসে এ যুদ্ধটি বসরার যুদ্ধ বা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে আলির বিরুদ্ধবাহিনী পরাজিত হয় কিন্তু পরবর্তী ইতিহাসে এ যুদ্ধের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।[৩৭] যুদ্ধের পর তিনি মদিনায় ফিরে আসেন এবং আরও বিশ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। এসময়ের মধ্যে তিনি কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নেন নি এবং আলীর সাথে মীমাংসা করেন। তার জীবদ্দশাতেই আলী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নিহত হন এবং প্রথম মুয়াবিয়া খলিফার পদে স্থলাভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে খলিফা হিসেবে মুয়াবিয়ার খিলাফতের কোন বিরোধিতাও তিনি করেন নি।[৩৮]

ইসলামে অবদান[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

আয়িশা ছিলেন ইসলামী নবী মুহাম্মদ (সা.) এর তিনজন কুরআন মুখস্থকারী স্ত্রীদের মাঝে একজন। হাফসার মতো আয়িশার কাছেও মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর লেখা কুরআনের অনুলিপি ছিল।[৩৯] আয়িশার জীবদ্দশাতে ইসলামের বেশ কিছু প্রসিদ্ধ ও সুস্পষ্ট বিধিবিধান যেমন নারীদের পর্দার বিধান চালু হয়।

রাজনৈতিক অবদান[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

বসরার যুদ্ধে হেরে যাবার পর আয়িশা মদিনায় ফিরে যান এবং একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন।[১] মদীনায় চলে আসার পর, তিনি রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন হতে অব্যহতি নেন। কিন্তু তারপরও রাজনীতিতে তার প্রভাব পুরোপুরি বন্ধ হয় নি। তিনি, নীরবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যহত রাখার মাধ্যমে তাদের পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে থাকেন। মুসলিম সমাজে তিনি জ্ঞানী মহিলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি পুরুষ সাহাবীদের সঙ্গে আইনকানুন নিয়ে তর্ক করতেন। [৪০] এসময় তিনি একদল মহিলার সঙ্গে হজ্জ করেন এবং হজ্জের সকল নিয়ম পুঙ্কানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করেন। জীবনের শেষ দুবছর তিনি সবাইকে মুহাম্মদ (সা.) এর গল্প শোনাতেন, এই উদ্দেশ্যে যে মুহাম্মদ (সা.) এর নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনাগুলো (জাল হাদিস) যেন বিলুপ্ত হয়ে যায়, যা তখনকার ইসলামী আইনের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করছিল। আর এভাবেই আয়েশার রাজনৈতিক প্রভাব ইসলামের উপর প্রভাব বিস্তার অব্যহত রেখেছিল। [১]

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

আয়িশা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৮ হিজরি সনের ১৭ই রমজান (১৬ই জুলাই, ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৮ বছর। সাহাবী আবু হুরায়রা তারাবিহ-এর নামাজের পর তার জানাজা পড়ান এবং বাকি কবরস্থানে তাকে কবরস্থ করা হয়।[৪১]

তার জীবনকর্ম নিয়ে কাজের মধ্যে সুলাইমান নদভীর রচিত সীরাতে আয়েশা অন্যতম।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Refbegin

টেমপ্লেট:Refend

আরও পড়ুন[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

  • উম্মূল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা , মাওলানা আ.ন.ম. আবদুল মান্নান, খোশরোজ কিতাব মহল
  • সীরাতে আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা , সাইয়্যেদ সুলায়মান নদভী , রাহনুমা প্রকাশনী, টেমপ্লেট:আইএসবিএন
  • উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা , মাওলানা নূরুর রহমান , এমদাদিয়া লাইব্রেরী ,
  • নবীপত্নি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর জীবনী, ২০১৪ , মাওলানা আল মুজাহিদ , রাবেয়া বুক হাউস
  • হযরত আয়েশা (আ:) এর জীবনী , রশিদ আহমেদ , শিরীন পাবলিকেশন্স
  • কণিষ্ঠ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) , হযরতুল আল্লামা সোলায়মান নদভী (রহ:) , শর্ষিণা লাইব্রেরী
  • মুহাদ্দিস ফকীহ্ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ও রাসূলুল্লাহর অন্যান্য বিবিগণ , তৃতীয় সংস্করণ ২০১৫ , এ. এস. এম. আজিজুল হক আনসারী ( সম্পাদক ) , মীনা বুক হাউস , ISBN 9879848991626
  • আয়েশা (রা.)-এর বর্ণিত ৫০০ হাদীস , মুয়াল্লীমা মোরশেদা বেগম , পিস পাবলিকেশন
  • Afshar, Haleh, Democracy and Islam, Hansard Society, 2006.
  • Rodinson, Maxime, Muhammad, 1980 Random House reprint of English translation
  • Aisha bint Abi Bakr, The Concise Oxford Dictionary of World Religions, Oxford University Press, 2000
  • Rizvi, Sa'id Akhtar, The Life of Muhammad The Prophet, Darul Tabligh North America, 1971.
  • Askri, Mortaza, 'Role of Ayesha in the History of Islam' (Translation), Ansarian publication, Iran
  • Chavel, Geneviève. Aïcha : La bien-aimée du prophète. Editions SW Télémaque. 11 October 2007. টেমপ্লেট:আইএসবিএন

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা | উৎস সম্পাদনা]

  1. ১.০ ১.১ ১.২ টেমপ্লেট:Harvnb
  2. টেমপ্লেট:Cite quran
  3. টেমপ্লেট:Harvnb
  4. ৪.০ ৪.১ টেমপ্লেট:Harvnb
  5. টেমপ্লেট:Harvnb
  6. টেমপ্লেট:Harvnb i.e., the year 613-614 ( ইংরেজি ভাষায় )
  7. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  8. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  9. টেমপ্লেট:Harvnb( ইংরেজি ভাষায় )
  10. স্ক্রিপ্ট ত্রুটি: "উদ্ধৃতি" নামক কোনো মডিউল নেই।
  11. স্ক্রিপ্ট ত্রুটি: "উদ্ধৃতি" নামক কোনো মডিউল নেই।
  12. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  13. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  14. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  15. টেমপ্লেট:Harvnb( ইংরেজি ভাষায় )
  16. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  17. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  18. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  19. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  20. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  21. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  22. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  23. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  24. The story is told multiple times in the early traditions, nearly all of the versions being ultimately derived from Aisha's own account. এইসব বর্ণনা পাওয়া জাবেঃ টেমপ্লেট:Hadith-usc, টেমপ্লেট:Hadith-usc and টেমপ্লেট:Harvnb. ( ইংরেজি ভাষায় )
  25. Great Women of Islam - Zaynab bint Jahsh( ইংরেজি ভাষায় )
  26. টেমপ্লেট:Hadith-usc(ইংরেজি ভাষায়)
  27. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  28. টেমপ্লেট:Hadith-usc ( ইংরেজি ভাষায় )
  29. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  30. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  31. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  32. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  33. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  34. ৩৪.০ ৩৪.১ ৩৪.২ টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  35. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  36. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  37. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )
  38. টেমপ্লেট:Harvnb
  39. স্ক্রিপ্ট ত্রুটি: "উদ্ধৃতি" নামক কোনো মডিউল নেই।
  40. টেমপ্লেট:Harvnb
  41. টেমপ্লেট:Harvnb ( ইংরেজি ভাষায় )